-- বিজ্ঞাপন ---

চীনের উইঘুর মুসলমান, কষ্টের জীবন যাদের

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের উপর চিনের খবরদারি নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। এ বার কড়া পদক্ষেপ করল আমেরিকাও। জিনজিয়াংয়ের উইঘুর ও তুর্কিভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নজরদারি চালানোর অভিযোগে চিনের ২৮টি সংস্থার উপর কার্যত কালো তালিকাভুক্ত করে দিল ট্রাম্প প্রশাসন। ওয়াশিংটনের অনুমোদন ছাড়া ওই সংস্থাগুলি আমেরিকার কাছ থেকে পণ্য, পরিষেবা বা প্রযুক্তি কিনতে পারবে না।
সোমবার প্রকাশিত মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের একটি নথিতে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অত্যাচার’ চালায় ওই সংস্থাগুলি। সেই কারণেই এই ২৮টি সংস্থাকে ‘এনটিটি লিস্ট’ বা কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ, ওয়াশিংটনের অনুমতি ছাড়া মার্কিন কোনও সংস্থার কাছ থেকে এই চিনা সংস্থাগুলি কিছু কিনতে পারবে না। ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই সংগঠনগুলি চিনের দমন-পীড়ন নীতি, গণ ডিটেনশন এবং উইঘুর, কাজাকস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নজরদারিতে চিন সরকারকে সাহায্য করে।
চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের ৪৫ শতাংশ জনসংখ্যাই উইঘুর এবং তুর্কিভাষী মুসলিম। শি জিনফিং সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ওই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে কার্যত ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকা-সহ প্রায় গোটা বিশ্বই সরব। রাষ্ট্রপুঞ্জেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় একই অভিযোগ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনেরও।
যদিও চিন সরকারি ভাবে সেই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিকে নাম দিয়েছে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’। উগ্রপন্থা রুখতে এবং এই জনগোষ্ঠীকে চিনা ভাষা ও সংস্কৃতিতে শিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি চালানো হয় বলে দাবি করে চিন।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুরদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস অনেক দিনের পুরানো।চীন বলেই তাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না। পরাশক্তির দাপটে চীন উইঘুর মুসলমানদের উপর যে পরিমান দমন পীড়ন চালায় তা এককথায় অমানুষিক। দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে জাতিগত  নিপীড়নের শিকার  তারা। কথায় কথায় নিষিদ্ধ। কোন কিছু সন্দেহ হলেই  আটক করে নির্যাতন। অসহায় উইঘুরদের কিছুই করার নেই।  অদ্ভুত সব বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এখানে। ১৮ বছরের নিচে যারা তারা গোফ ছাড়া দাঁড়ি রাখতে মানা।  পুরুষের মসজিদে প্রবেশে আছে নিষেধাজ্ঞা।  নারীদের হিজাব পরার উপরেও আছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বলা হয়ে থাকে হিজাব উইঘুর নারীদের যতটা না ধর্মীয় তার থেকে বেশি সাংস্কৃতিক উপাদান। এ ছাড়াও রাস্তায় দলবদ্ধ হয়ে হাটা কিংবা টুপি পরার উপরও মানা আছে এখানে। এমন কি মানা আছে বাচ্চাদের ধর্মীয় নাম রাখার ক্ষেত্রেও।
উইঘুরদের ধর্মীয় সকল কাজ দেখা হয় সন্দেহের দৃষ্টিতে। তাই রোজা রাখা কিংবা নামাজ পড়া এখানে বিশাল সন্ত্রাসী কাজ। ফলে নামাজ পড়লে কিংবা রোজা রাখার অপরাধে এখানে গ্রেফতার করা হয় নাগরিকদের। চীনা ভাষায় কুরআন অনুবাদের অপরাধে সালিম দামল্লাম নামে উইঘুর নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো যিনি কিছুদিন আগে কারাগারেই মৃত্যু বরণ করেন।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে দেখা যায় জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি লম্বা দাড়ি রাখায় তাকে ছয় বছরের কারাদন্ড দিয়েছে চীনের একটি আদালত। মনে হতে পারে নিজ দেশে পরবাসী এক জাতির গল্প বলা হচ্ছে। কিন্ত এত কিছুর পরেও তারা ভুলে যাননি নিজেদের পরিচয়। বরং শত অত্যাচারের মধ্যেও সব সময় সরব থেকেছে নিজেদের অধিকার নিয়ে। প্রতিবাদ করে যাচ্ছে লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ### ৮.১০.১৯