ঢাকা, ২০ মে:
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ তাদের চূড়ান্ত সুপারিশমালা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছে হস্তান্তর করেছে।
রবিবার (১৯ মে) বিএসইসির কমিশনার মো. আলী আকবরের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশমালা কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাস্কফোর্সের সদস্য অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ডিএসই’র সাবেক এমডি ও বিয়াক-এর সিইও কে এ এম মাজেদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমিন।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালায় প্রস্তাবিত সংস্কার:
চূড়ান্ত সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল মেয়াদি (Closed-End) ফান্ডকে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে অবশ্যই অবসায়ন করতে হবে। তবে বিশেষ সাধারণ সভায় (EGM) ইউনিটহোল্ডারদের ৭৫% ভোট পেলে ফান্ড ওপেন-এন্ডে রূপান্তরিত হতে পারবে। পুরনো মেয়াদি ফান্ডগুলোর জন্য ৬ মাসের মধ্যে EGM আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ফান্ড প্রকারভেদে বাধ্যতামূলক সম্পদ বরাদ্দ নীতিমালা প্রণয়ন, একক শেয়ারে বিনিয়োগ সীমা ১০% থেকে ১৫% এবং শিল্প খাতে ২৫% থেকে ৩০% করার সুপারিশ এসেছে। তালিকাভুক্ত নয় এমন ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হলেও ‘A’ ক্যাটাগরির কোম্পানির বন্ড ও প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ফান্ড ব্যয় সীমা বার্ষিক ৩% নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ফিক্সড ইনকাম বা মানি মার্কেট ফান্ডের ক্ষেত্রে ২%। পাশাপাশি লাভের অন্তত ৭০% ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ এবং ওপেন-এন্ড ফান্ডে ইউনিটপ্রতি অর্জিত লাভ বা গড় আয় যেটি কম, তার ন্যূনতম ৩০% লভ্যাংশ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনে প্রস্তাব:
আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিক অনুমোদন দেবে এবং বিএসইসি তা চূড়ান্ত করবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। নিরীক্ষক নির্বাচন, ইস্যু ম্যানেজারের ভূমিকা, প্রাইসিং মডেল এবং কর্পোরেট গভর্নেন্সের উপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন হলে আইপিও প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
বিএসইসির প্রত্যাশা:
বিএসইসি জানিয়েছে, এই সুপারিশের ভিত্তিতে আইনি সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। টাস্কফোর্সের প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে কমিশন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.