-- বিজ্ঞাপন ---

আন্তর্জাতিক ক্রেতার নজর কাড়ছে চীনের J-10CE যুদ্ধবিমান!

সিরাজুর রহমান#

বর্তমানে চীনের তৈরি অত্যাধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান J-10CE (Vigorous Dragon) আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি চেংডু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের (CAIG) অ্যাসেম্বলি লাইন থেকে এই যুদ্ধবিমানের একটি নতুন ব্যাচ উন্মোচিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ব্যাচটি একটি গোপন রপ্তানি চুক্তির আওতায় তৈরি, যদিও ঠিক কোন দেশের জন্য এসব যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করা হয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিমানগুলো সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো ক্রেতার জন্য নির্মিত হচ্ছে। বিশেষ করে আফ্রিকার প্রভাবশালী রাষ্ট্র মিশর সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। যদিও এখনো বিষয়টি চীনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কারিগরি অগ্রগতির কারণে J-10CE মডেলটি আন্তর্জাতিক বাজারে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

J-10CE চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (PLAAF) ব্যবহৃত J-10C যুদ্ধবিমানের একটি এক্সপার্ট ভার্সন। এটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার, যা আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি রপ্তানির জন্য তৈরি হলেও, এতে চীনের নিজস্ব উন্নত প্রযুক্তি ও যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে রয়েছে শক্তিশালী রাডার সিস্টেম, আধুনিক অ্যাভিওনিক্স এবং উন্নত অস্ত্রসজ্জ।

গত ২০২২ সালে পাকিস্তান প্রথম দেশ হিসেবে J-10CE সংগ্রহ করে। চীনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫টি J-10CE যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল PL-15 দীর্ঘপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ও PL-10 শর্ট রেঞ্জ মিসাইল। পাকিস্তান খুব দ্রুত এই প্ল্যাটফর্ম অপারেশনাল করে এবং সীমান্ত উত্তেজনার সময় সীমিত সংঘর্ষে ব্যবহার করে সাফল্য অর্জন করে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়।

যদিও পাকিস্তানের তরফে ভারতের ৫ থেকে ৬টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভারতও কিন্তু পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানসহ বেশকিছু যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। তাই যুদ্ধরত কোন পক্ষের দাবি একতরফাভাবে অতিরঞ্জিত হতে পারে এবং বাস্তবে তা মেনে নেওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তবে তা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে চীনের তৈরি J-10CE যুদ্ধবিমানের সক্রিয় ব্যবহার ও কার্যকারিতা আন্তর্জাতিক মনোযোগকে অনেকটাই আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

J-10CE যুদ্ধবিমানে রাশিয়ার তৈরি একটি AL-31FN অথবা চীনের নিজস্ব WS-10B টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এতে অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (AESA) রাডার প্রযুক্তি রয়েছে, যা উন্নত টার্গেট শনাক্তকরণ ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষমতা নিশ্চিত করে। অ্যাভিওনিক্স সিস্টেম হিসেবে রয়েছে ফ্লাই-বাই-ওয়্যার কন্ট্রোল সিস্টেম, আধুনিক হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লে, এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। অস্ত্রসজ্জায় রয়েছে আধুনিক PL-10 ও PL-15 মিসাইল, স্মার্ট বোমা, এবং এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইল।

তাছাড়া চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় J-10CE সিরিজের যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৬ টন এবং রাডার ক্রস সেকশন (আরসিএস) ২ স্কোয়ার মিটার দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তবে যুদ্ধবিমানের আরসিএস সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত যুক্তিসঙ্গত কারণেই কিছুটা কম বেশি হতে পারে।

বিশ্বের যেসব দেশ পশ্চিমা যুদ্ধবিমান পেতে নিষেধাজ্ঞা, উচ্চমূল্য অথবা রাজনৈতিক চাপে রয়েছে, তাদের জন্য J-10CE একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে চীন শুধু নিজের প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করছে না, বরং আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারেও এক নতুন মাত্রা যোগ করছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, J-10CE এর প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা, এবং চীনের নমনীয় রপ্তানি কৌশলের কারণে এই যুদ্ধবিমান আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্যে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। এটি এখন চীনের বৈশ্বিক সামরিক প্রভাব বিস্তারে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.