সিরাজুর রহমান#
আমাদের সৌরজগৎ বা সোলার সিস্টেম, যার কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য নামক এক নক্ষত্র৷ আমাদের সোলার সিস্টেম কিন্তু মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রীয় ভরের চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২২৮ কিমি বেগে, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৮৩০,০০০ কিমি বেগে। এই গতি বজায় রেখে সৌরজগৎ একবার গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করতে সময় নেয় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ কোটি বছর। যাকে কসমোলজির ভাষায় গ্যালাকটিক ইয়ার বলে থাকেন জোতির্বিজ্ঞানীরা।
ছায়াপথের নিজস্ব গতি ও তার অজানা গন্তব্য:
আমাদের সোলার সিস্টেমের পাশাপাশি আকাশগঙ্গা ছায়াপথ নিজেই এক মহাজাগতিক গতিশীল সত্তা। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫৫০ কিমি বেগে অ্যান্ডোমিডা গ্যালাক্সির দিকে ধাবিত হচ্ছে। মহাকর্ষীয় টান ও গ্যালাক্সির পারস্পরিক আকর্ষণের ফলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, আগামী প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পরে এই দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হবে এবং একটি নতুন গ্যালাক্সি জন্ম নিবে। বিজ্ঞানীরা আবার যার নাম দিয়েছেন “মিল্কোমিডা” সুপার জায়ান্ট গ্যালাক্সি।
হাইপারভেলোসিটি স্টার সিস্টেম:
বিজ্ঞানীরা আমাদের চিরচেনা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের এমন কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ধাবমান নক্ষত্র আবিষ্কার করেছেন। যেগুলোর গতি এত বেশি যে তারা গ্যালাক্সি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের নক্ষত্রকে বলা হয় “হাইপারভেলোসিটি স্টার”। আর বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কৃত এই “হাইপারভেলোসিটি স্টার” নক্ষত্রের গতি হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ লক্ষ হয়ত থেকে ৮০ লক্ষ কিলোমিটার বা তারও বেশি।
এই “হাইপারভেলোসিটি স্টার” সিস্টেম সাধারণত ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি কোনো তীব্র মহাজাগতিক ঘটনা বা “গ্র্যাভিটেশনাল স্লিংশট”-এর কারণে গতিতে ছিটকে যায়। তার পাশাপাশি এটি বিক্ষিপ্তভাবে ছায়াপথের নিজস্ব গ্রাভিটেশনাল ফোর্সকে এড়িয়ে বিক্ষিপ্তভাবে এবং অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকে এবং এক ছায়াপথ থেকে আরেক ছায়াপথে প্রবেশ করে।
তাহলে সুবিশাল মহাবিশ্বে আমরা কোথায় যাচ্ছি?
এই প্রশ্নের সরল কোন উত্তর নেই। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আমরা মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর মহাযাত্রার অংশগ্রহণ করছি। প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি স্তরে আমরা অবিরাম গতিতে ছুটে চলেছি। পৃথিবী, সৌরজগৎ, গ্যালাক্সি এমনকি মহাবিশ্বের সব মিলিয়ে আমাদের সামগ্রিক গড় গতি হতে পারে আনুমানিক প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫ লক্ষ কিমি বা তারও বেশি।
আমরা এই মহাজাগতিক অবজেক্টের চলমান গতি সচেতনভাবে তা বুঝতে না পারলেও, এই গতির প্রভাব মহাবিশ্বের বিন্যাস, শক্তির বণ্টন, এমনকি মহাজাগতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, এই মহাবিশ্ব একটি বিশাল আকারের গতিশীল কসমিক নেটওয়ার্ক। যেখানে প্রতিটি অবজেক্ট এক আশ্চর্যজনক গতির মাধ্যমে তাদের নিজস্ব কক্ষপথে চলমান রয়েছে। আমরা যদিও এই ছোট্ট পৃথিবীতে নিজেদের স্থির মনে করি, প্রকৃতপক্ষে আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত কোটি কোটি কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলেছি। এই মহাজাগতিক গতি আমাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিস্ময় জাগায়, এবং আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে অনুপ্রাণিত করে।
তথ্যসূত্র: NASA | ESA | Nature Astronomy | Britannica | Space.com
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.