সিরাজুর রহমান#
চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে এক যুগান্তকারী মহাকাশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। জুনের শেষে স্বাক্ষরিত চুক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩৬ সালের মধ্যেই এই নিউক্লিয়ার প্লান্টের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিশর, পাকিস্তান, ভেনিজুয়েলা, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই গবেষণা কেন্দ্রটি হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-নির্ভর। প্লান্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে গবেষণাগারের পরিচালনা পর্যন্ত প্রায় সব কাজই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, ফলে সেখানে সরাসরি মানুষের কাজ করার প্রয়োজন হবে না।
বিশ্বের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তিনির্ভর লুনার মিশন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বাস্তবায়নে থাকবে বিপুল অর্থায়নের প্রয়োজন এবং উন্নত প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে, NASA এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) বহু আগেই চাঁদ ও মঙ্গল নিয়ে উচ্চাভিলাষী মহাকাশ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। কিন্তু অর্থসংস্থান ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই আজও বাস্তবায়নযোগ্য হয়নি, কেবল রোবোটিক মিশন পর্যন্ত সীমিত থেকেছে।
২০০০ সালের দিকে ESA ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা পরবর্তী এক দশকের মধ্যে চাঁদের বুকে ‘লুনার ভিলেজ’ গড়ে তুলবে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট ও উন্নত প্রযুক্তির অভাবে সেই পরিকল্পনা আজও বাস্তবে রূপ পায়নি।
এদিকে বর্তমানে ‘আর্টেমিস’ নামে এক উচ্চাভিলাষী কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মানবচালিত লুনার মিশন পরিচালনার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—মাত্র ৪ থেকে ৫ জন মহাকাশচারী নিয়ে সফলভাবে চাঁদে অবতরণ এবং তাঁদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য যে উন্নত স্পেসক্রাফট প্রয়োজন, তার পূর্ণাঙ্গ রূপ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে যাই হোক, চীন ও রাশিয়ার এই যৌথ পদক্ষেপ শুধু নতুন এক মহাকাশ প্রতিযোগিতার সূচনাই নয়, বরং বৈশ্বিক মহাকাশ শক্তি হিসেবে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এক নীরব ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর ইঙ্গিতও দেয়। ভবিষ্যতের লড়াই হবে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশে স্থায়ী উপস্থিতি অর্জন নিয়ে। কে আগে আউটার স্পেস টেকনোলজিতে এগিয়ে যাবে—সেটিই এখন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.