সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার এবং সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাশেম কামাল ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ।
সভায় এডভোকেট এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার বলেন— চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র, যা ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৩৩,৯০৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিভাগে প্রায় ৩ কোটি মানুষ বসবাস করে। রয়েছে ১১টি জেলা, ১০৩টি উপজেলা এবং দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দরসহ বিশাল শিল্প, ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ৭৫% এবং আমদানি বাণিজ্যের ৮০% পরিচালনা করে এবং জাতীয় রাজস্বের ৬০% যোগান দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন— ডেটা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম এশিয়ার ৭ম এবং বিশ্বের ১০ম দ্রুততম উন্নয়নশীল নগরী। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রামবাসী হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ লক্ষ মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে ৬ লক্ষ হাইকোর্টে। শুধু ঢাকায় একটি স্থায়ী হাইকোর্ট থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ বিচার পেতে অতিরিক্ত খরচ, প্রতারণা ও দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হচ্ছে।
তিনি দাবী করেন— হাইকোর্ট সার্কিট বেঞ্চ চট্টগ্রামের আইনগত, সাংবিধানিক ও বাস্তবসম্মত অধিকার। চট্টগ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠী, অর্থনৈতিক অবদান এবং বন্দর ও কাস্টমস সংক্রান্ত মামলার চাপ বিবেচনায় এখানেই একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ জরুরি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১০০, ১৯(১), ২৭, ৩১, ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকের ন্যায়বিচার ও আইনের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এটি অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাপী প্রধান বন্দরের নিকটবর্তী শহরগুলোতে সংশ্লিষ্ট আদালত ও হাইকোর্ট সুবিধা রয়েছে (যেমন সাংহাই, মুম্বাই, রটারডাম ইত্যাদি)। চট্টগ্রামেও এই প্রথা অনুসরণ করা উচিত।
চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী আবুল মনসুর বলেন,আজকে সহ অতীতে অনেক সংবাদ সম্মেলন হয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ বাস্তবায়নের জন্য। কিন্ত কোন ফল আসেনি। এটিকে বাস্তবরূপ দিতে হলে হাইকোর্ট বাস্তবায়ন পরিষদ ও সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দকে জনগণের কল্যাণে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে এবং যারা চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে সেই বাধা ভাঙ্গতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যা করতে হবে এখনই করতে হবে। দলীয় সরকার আসলে এটি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। কাজী মনসুর বলেন, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে, অথচ এখনও এ বিষয়টি মিমাংসা হয় নি। চট্টগ্রামের হাইকোর্ট এর স্থায়ী বেঞ্চ হবে, নাকি সার্কিট বেঞ্চ হবে এটিও ক্লিয়ার হওয়া প্রয়োজন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক এ.কে.এম. জহরুল ইসলাম বলেন,এরশাদ সরকার সৈরাচারী হলেও তিনি জনগনের কল্যাণে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর চট্টগ্রাম বুরো প্রধান মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন,১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ থেকে এই পূর্ব বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের স্বার্থের পরিপন্থি।কলকাতা কেন্দ্রীক এলিট স্বার্থবাদী মহল পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের বিচারবিভাগসহ, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের পথে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করেছিলো, তখনও কলকাতার পাশাপাশি ঢাকায় হাইকোর্ট স্থাপনের বিরোধীতা করেছিলো একটি কুচক্রী মহল। এই চক্র পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে রাওয়ালপিন্ডিতে ভর করেছিলো। একইভাবে বর্তমানে তারা ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের বিচার বিভাগসহ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিচার প্রাপ্তি সহজীকরণের যেকোন উদ্যোগকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন,বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন দেশের জনগনের সার্বিক কল্যানে চট্টগ্রামসহ সাবেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্হাপনের প্রস্তাব করেছেন, যা যুগোপযোগী ও দেশের মানুষের জন্য সার্বিক কল্যানকর। চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক বলেন,চট্টগ্রামের বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকারের আমলেই হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করা অতীব জরুরী। বিশিষ্ট মানবাধিকার নেতা এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন,আন্তর্জাতিক
রিপোর্ট মতে ঢাকা বিশে^র সবচেয়ে দূষিত নগরী,ফলে ঢাকাকে রক্ষায় প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ আবশ্যক। একইসাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের
উন্নতিকল্পেও এটি সহায়ক। ঢাকায় গমন ও অবস্থান ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র জনগন রিটসহ অন্যান্য প্রতিকার পেতে ঢাকা যেতে পারছেনা। ফলে সাধারণ জনগনের বিচারপ্রাপ্তি ব্যাহত হচ্ছে।
পরিশেষে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি বলেন,জনগনের আইনের অধিকার নিশ্চিতে ও আইনী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের কোন বিকল্প নেই।#
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.