বিশেষ প্রতিনিধি
কোন প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই হঠাৎ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাকে দু’ভাগ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ থানার মধ্যে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হচ্ছে ১২নং চিকনদন্ডী ইউনিয়ন। এখানে লোকসংখ্যা প্রায় ১ লাখের কাছাকাছি। এ ইউনিয়নটির সাথে নগরীর ১নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড পাশাপাশি। হাটহাজারী থানার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। মাত্র ১৫ মিনিটে যাওয়া যায়। অথচ প্রস্তাবিত হালদা থানায় ১২নং চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেখানে যেতেই লাগবে দু’ঘন্টার বেশি। এ নিয়ে গত প্রায় ১ মাস ধরে চলছে নানা অসন্তোষ। চিকনদন্ডীবাসী কোন অবস্থাতেই হালদা থানায় সংযুক্ত হওয়ার পক্ষে না। প্রতিদিন চলছে মিটিং,মিছিল সমাবেশ। এর মধ্যে ১০ হাজার মানুষের গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্ত প্রশাসন নির্বিকার। চিকনদন্ডীবাসী নায্য ও বাস্তব সম্মত দাবীর প্রতি কারও নজর নেই। এ অবস্থায় এলাকার হাজার হাজার মানুষ এখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি জানলে অবশ্যই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত দেবেন।
সূত্র মতে, চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের আয়তন ২,৭৬১ একর বা ১১.১৭ বর্গ কিলোমিটার।হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণাংশে চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। এ ইউনিয়নের পূর্বে শিকারপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়ন ও উত্তর মাদার্শা ইউনিয়ন; উত্তরে ফতেপুর ইউনিয়ন; পশ্চিমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড এবং দক্ষিণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড অবস্থিত। চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন হাটহাজারী উপজেলার আওতাধীন ১২নং ইউনিয়ন পরিষদ। এটি জাতীয় সংসদের ২৮২নং নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৫ এর অংশ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম হাটহাজারী মডেল থানার আওতাধীন। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন নেহালপুর, চিকনদণ্ডী ও খন্দকিয়া এ ৩টি মৌজা নিয়েই গঠিত। এই চিকনদন্ডী ইউনিয়নের সাথে হাটহাজারী থানার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত।
জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম হাটহাজারী মডেল থানাকে বিভক্ত করে “হালদা থানা” স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি পুলিশের ঢাকা হেড কোর্য়াটারের এডিশনাল ডিআইজির বরাবরে একটি প্রস্তাব পাঠান। যেখানে হাটহাজারী থানাকে দু’ভাগ করে ‘হালদা’ নামে একটি নতুন থানার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবিত থানায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাঁচটি ইউনিয়ন: উত্তর মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, চিকনদন্ডী, শিকারপুর ও বুড়িশ্বর। চাওয়া হয় জনবলসহ নানা সরঞ্জাম। কিন্ত প্রশ্ন উঠেছে, ১২ নং চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে হালদা থানায় নেয়ার বিষয়টি নিয়ে। কারন এটি কোন অবস্থাতে বাস্তব সম্মত নয়। কেন এবং কি কারনে এই ইউনিয়নকে প্রস্তাবিত হালদা থাকায় সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই ইউনিয়নবাসীর সাথে হাটহাজারী থানার দুরত্ব একেবারে নিকটে। যেতে সময় লাগে বড় জোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সেখানে প্রস্তাবিত হালদা থানায় যেতে সময় লাগবে দু’ঘন্টা!
এ বিষয়ে আলাপকালে চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক ও চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজী আবুল মনসুর বলেন , ‘এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। কোন থানা ভাগ করতে হলে সে থানার উপর যথেষ্ট স্টাডি প্রয়োজন। হঠাৎ করে থানা ভাগ হলে সাধারন মানুষ বিপাকে পড়ে। তিনি বলেন, থানা ভাগ করার প্রয়োজন হলে করতে পারে কিন্ত ১২নং চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে কেন বা কিসের উপর ভিত্তি করে হালদা থানায় সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। এই ইউনিয়নের মানুষকে হালদা থানায় যেতে হলে মধ্যবর্তী লালা চন্দ্র বিল পার হয়ে যেতে হবে। এখানে মানুষ দিনের বেলায়ও যেতে ভয় পায়। বর্ষাকালে ডুবে থাকে এ বিল। তাছাড়া ১২নং চিকনদন্ডী ইউনিয়নের সাথে হালদার দুরত্ব এত বেশি যা বলা বাহুল্য। কাজী মনসুর বলেন, হঠাৎ করে কোন থানা ভাগ করতে হলে এনআইডি, পাসপোর্ট, শিক্ষা সংক্রান্ত সার্টিফিকেটে জটিলতা দেখা দেবে। বিদেশগামী ও প্রবাসীরা বিপাকে পড়বে। যারা ভাগ করার তারা কাগজে কলমে ভাগ করে দিয়ে যাবে। কিন্ত সাধারন মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না। তিনি পুরো বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।’
এদিকে প্রস্তাবিত হালদা থানায় না যেতে মাঠে আন্দোলনে নেমেছে চিকনদন্ডীর হাজার হাজার মানুষ। চলছে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি,মিছিল, সমাবেশ। চিকনদন্ডীবাসী দলমত নির্বিশেষে আয়োজন করে সাংবাদিক সম্মেলনের। লিখিত বক্তব্যে এ্ই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, গত ১৯ এপ্রিল হাটহাজারী থানায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামতের বিপরীতে জেলা পুলিশ সুপার এই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, যা ৮০ হাজার জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত হালদা থানা মদুনাঘাট এলাকায় স্থাপিত হবে, যা চিকনদন্ডী থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে বর্ষাকালে আইনি সেবা গ্রহণ দুরূহ হয়ে পড়বে।চিকনদন্ডী ইউনিয়নের প্রায় ৮০ হাজার বাসিন্দা নতুন থানায় অন্তর্ভুক্ত না হয়ে পূর্বের হাটহাজারী মডেল থানার অধীনে থাকতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কসংলগ্ন চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে নতুন থানায় যুক্ত করা হলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে প্রস্তাবিত থানার দূরত্বের কারণে পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া কঠিন হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা চিকনদন্ডী ইউনিয়নকে হাটহাজারী মডেল থানায় বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।##
-- বিজ্ঞাপন ---
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.