-- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান–আজারবাইজানের মধ্যে ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা চুক্তি!

সিরাজুর রহমান#

চলতি ২০২৫ সালের ৬ জুন, পাকিস্তান সরকার তাদের সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ঘোষণা করে যে আজারবাইজানের সঙ্গে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৪০টি জেএফ-১৭ (Thunder) ব্লক-৩ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। আবার এর চুক্তির আলোকে ওয়েপনস প্যাকেজ, প্রশিক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি লজিস্টিক সহায়তা্র বিষয়টি অন্তভুক্ত করা হয়েছে।পাকিস্তান এই চুক্তিতে প্রদায়ক দেশ (Supplier)। তারা আজারবাইজানকে JF‑17 Thunder Block III যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে। বিমানগুলো তৈরি করছে পাকিস্তান ও চীনের যৌথ প্রতিষ্ঠান Pakistan Aeronautical Complex (PAC) ও Chengdu Aircraft Corporation (CAC), China।
জেএফ-১৭ ব্লক-৩ হলো পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স ও চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। সর্বশেষ ব্লক-৩ সংস্করণে রয়েছে উন্নত AESA রাডার, হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, এবং পিএল-১০ ও পিএল-১৫ মিসাইলসহ আধুনিক অস্ত্রসজ্জা। তবে উল্লেখযোগ্য যে, প্রযুক্তিগতভাবে এই যুদ্ধবিমানটিতে চীনের উপর নির্ভরতা প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

রাশিয়ার RD-93 টার্বোফ্যান ইঞ্জিনচালিত এই হালকা যুদ্ধবিমানটির সর্বোচ্চ পে-লোড ক্ষমতা প্রায় ৩.৪ টন এবং এতে রয়েছে ৭–৮টি হার্ডপয়েন্ট। এর ব্লক-৩ সিরিজটি প্রথম প্রকাশ পায় ২০১৯ সালে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের নিজস্ব প্লান্টে। তবে অতি সাম্প্রতিক গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সীমিত সংঘাতে পাকিস্তান এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সক্রিয় এরিয়াল কমব্যাট মিশন পরিচালনা করেছে বলে দাবি করা হয়।

এদিকে রাডার ক্রস সেকশন (RCS)-এর দিক থেকেও এই যুদ্ধবিমানটি অনেকটাই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে। জেএফ-১৭ ব্লক-৩ এবং চীনের জে-১০সি-এর RCS আনুমানিক ২–৩ স্কোয়ার মিটার দেখানো হয়েছে। যেখানে ভারতের তেজস এমকে১এ এবং সুইডিশ গ্রিপেন ই সিরিজের RCS যথাক্রমে ১ ও ১.৫ স্কোয়ার মিটার বলে জানা যায়। যদিও বাস্তব ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান কিছুটা ভিন্নও হতে পারে।
তবে এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো, মাত্র ৪০টি হালকা যুদ্ধবিমানের জন্য ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের মূল্য কতটা যৌক্তিক? আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি জেএফ-১৭ ব্লক-৩ এর দাম ২৫–৩৫ মিলিয়ন ডলার হওয়ায় সর্বোচ্চ ১.৬ বিলিয়ন ডলারেই বিমানের মূল মূল্য সীমাবদ্ধ থাকার কথা। অতিরিক্ত ব্যয়ের পেছনে অবশ্য অস্ত্রসজ্জা, প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যৌথ শিল্প-সহযোগিতার বিষয়গুলো অন্তভুক্ত থাকতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এক্ষেত্রে প্রকৃত অস্ত্রসজ্জা এবং বিমানের খাতে মোট ব্যয় হতে পারে ২.৫ বিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি এবং এর পাশাপাশি বাকি অর্থ ব্যয় হতে পারে সামরিক শিল্প সহযোগিতা ও দেশ দুটির কৌশলগত বিনিয়োগে। যদিও পাকিস্তানের তরফ থেকে এসব তথ্য বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
আজারবাইজান গত ২০২০ সালের নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করেছে। এদিক থেকে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমিয়ে কৌশলগত কারণে তারা এখন তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীনের মতো দেশের দিকে দিকেই ঝুঁকছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানও চীনের সহায়তায় প্রতিরক্ষা রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, নাইজেরিয়া, মিয়ানমার ও ইরাকের পর আজারবাইজানের সাথে জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান রপ্তানির চুক্তিতে যুক্ত হওয়ায় এটি পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ চুক্তির ফলে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে এবং এটি দুই মুসলিম দেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ## তথ্যসূত্র: Janes, Wikipedia, Defence Security Asia, Flight Global

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.