-- বিজ্ঞাপন ---

লসএঞ্জেলসে ইমিগ্রেশন রেইড ঘিরে বিক্ষোভ, জাতীয় রক্ষী মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক#

লসএঞ্জেলসে ভয়াবহ উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে ৬ জুন, শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্তৃপক্ষ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪৪ জন অভিবাসীকে আটক করে। এসব রেইড পরিচালিত হয় হোম ডিপো, স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রমজীবী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। ICE-এর দাবি, এদের মধ্যে অধিকাংশই “অবৈধ অভিবাসী” এবং তাদের বিরুদ্ধে আগেই ডিপোর্টেশন অর্ডার ছিল। এই রেইডের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই শহরের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় প্রতিবাদ, যা দ্রুত রূপ নেয় সংঘর্ষে।

প্রতিবাদকারীরা প্রথমে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলেও ৭ জুন রাত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ডাউনটাউন লসএঞ্জেলসের রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে, আগুন লাগিয়ে দেয় রোবট ট্যাক্সি এবং পুলিশের গাড়িতে। তারা পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছোড়ে এবং বিভিন্ন সরকারি ভবনের জানালা ভাঙচুর করে। ন্যাশনাল গার্ড ও পুলিশের যৌথ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। সংঘর্ষে আহত হন অনেক বিক্ষোভকারী এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, যাদের মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক লরেন টোমাসি, যিনি একটি রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন লাইভ সম্প্রচারের সময়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (পুনঃনির্বাচিত, ২০২৪) ২,০০০ জাতীয় রক্ষী বাহিনী (National Guard) মোতায়েনের নির্দেশ দেন। তাদের একটি অংশ ইতোমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োজিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এবং লসএঞ্জেলসের মেয়র কারেন বাস এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, “ফেডারেল সরকার আমাদের শহরের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” গভর্নর আরও বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো ফেডারেল বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার এই প্রবণতা অগণতান্ত্রিক এবং বিপজ্জনক।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে অবৈধ ও সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, অবৈধভাবে চালানো ফেডারেল অভিযান ও বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে তারা আদালতে যাবেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে। ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলীয় মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক নিরাপত্তা নিয়ে, বিশেষ করে লাইভ সম্প্রচারে সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার পর। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনাগুলো আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাজনীতিতে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করবে।

জানা গেছে, বর্তমানে আটক ব্যক্তির সংখ্যা ৪৪ জন অভিবাসী,টানা ৩ রাত ধরে চলছে বিক্ষোভ, আহত হয়েছেন বহু বিক্ষোভকারী ও অন্তত ৪ জন সাংবাদিক, গ্রেপ্তার কমপক্ষে ২০ জন বিক্ষোভকারী। মোতায়েন করা হয়েছে ২০০০ ফেডারেল রক্ষী বাহিনী।

লসএঞ্জেলসের চলমান বিক্ষোভ শুধু একটি শহরের ইমিগ্রেশন ইস্যু নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন, নাগরিক অধিকার এবং কেন্দ্রীয় বনাম রাজ্য ক্ষমতার সংঘাতের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো লক্ষণ এখনও স্পষ্ট নয়। # ছবিঃ রয়টার্স

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.