-- বিজ্ঞাপন ---

প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্তভাবে ৬০টি বায়রাক্তার আকিনসি কমব্যাট ড্রোন পেতে যাচ্ছে সৌদি আরব!

সিরাজুর রহমান#

সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট বায়কার (Baykar) ট্রেনিং সেন্টারে সৌদি আরবের বায়রাক্তার আকিনসি কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) অপারেটরদের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করে খুব দ্রুত সৌদি আরবে ফিরে যাবে।
আসলে গত ২০২৩ সালে সৌদি আরব তুরস্কের Baykar কোম্পানির কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিমূল্যে মোট ৬০টি আকিনসি (ইউসিএভি) কমব্যাট ড্রোন ক্রয় করে। আর ডেলিভারি প্রক্রিয়া চলতি ২০২৫ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এই কমব্যাট ড্রোনের মূল ব্যবহারকারী হবে রয়্যাল সৌদি এয়ার ফোর্স এবং সৌদি নেভাল ফোর্স।
তুরস্কের তৈরি আকিনসি (Akinci) কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) হলো একটি উচ্চ প্রযুক্তির হেভি ডিউটি কমব্যাট ড্রোন, যা মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান (UCAV) হিসেবে কাজ করে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ করতে পারে।
এর এয়ার কমব্যাট সক্ষমতা সাধারণ ড্রোনের তুলনায় অনেকটাই উন্নত করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একাধারে অধিক উচ্চতায় উড্ডয়ন, দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকা, এবং বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র (যেমন লাইট মিসাইল ও স্মার্ট বোমা) বহন করতে সক্ষম। তবে গত ৮ অক্টোবর অপ্রত্যাশিতভাবে তুরস্কের একটি আকিনসি ড্রোন সুদানের দারফুর অঞ্চলের আকাশে বিদ্রোহীরা বা Rapid Support Forces (RSF) শুট ডাউন বা ধ্বংস করেছে।
এটি হচ্ছে বিশ্বে সার্ভিসে থাকা অন্যতম বৃহৎ আকৃতির কমব্যাট ড্রোনগুলোর মধ্যে একটি। যা কিনা এয়ার লঞ্চড বেসড স্ট্যান্ড অফ ক্রুজ মিসাইল (এসওএম) বহন ও হামলার করতে সক্ষম। তাছাড়া তুরস্ক পূর্বে জানিয়েছিল যে, এটি থেকে সীমিত ওজনের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব।
এর দৈর্ঘ্য ১২.৫ মিটার, দুই ডানার মাঝের দূরত্ব ২০ মিটার এবং উচ্চতা ৪.১০ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৫,৫০০ কেজি। আকিনসি-বি সিরিজের কমব্যাট ড্রোনে দুটি ইউক্রেনের মোটর সিচ কোম্পানির তৈরী ইভশেঙ্কো প্রগ্রেসের তৈরি ৭৫০ হর্স পাওয়ারের এআই-৪৫০টি টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও সর্বশেষ আপগ্রেড ভার্সন আকিনসি-সি সিরিজের কমব্যাট ড্রোনে ৮৫০ হর্স পাওয়ারের দুটি শক্তিশালী টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
এটি ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ফিট উচ্চতায় (সার্ভিস সিলিং) উড্ডয়ন করতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে প্রতি ঘণ্টায় ৩৬১.১৪ কিলোমিটার এবং ক্রুইজ স্পিড ২৮০ কিলোমিটার। তাছাড়া এর SATCOM-assisted অপারেশনাল রেঞ্জ প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার হলেও বাস্তবে এর কার্যকর কমব্যাট রেডিয়াস প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
এটি একবার জ্বালানী নিয়ে আকাশে একটানা ২৪/২৫ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। আর বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তির বিচারে আকিঞ্চির ৩৬১.১৪ কিলোমিটার গতিকে অনেকটাই বেশি গতি সম্পন্ন এরিয়াল (ইউসিএভি) সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) এ নিজস্ব দেশীয় প্রযুক্তির (এইএসএ) রাডার, ইলেকট্রনিক্স সাপোর্ট পড এবং সাইট এণ্ড স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম, এসানসাল কমন এপারচার টার্গেটিং সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।
আবার এই ড্রোনের মেরিটাইম স্টাইক সক্ষমতা যাচাই করলে দেখা যায় যে, এটি বাস্তবিক অর্থেই অনেক লাইট যুদ্ধবিমান থেকেও এগিয়ে রয়েছে। এটি অনেকটা সেমি স্টেলথ ক্যাপাবিলিটির হওয়ার জন্য শত্রু পক্ষ খুব সহজেই একে ডিটেক্ট করতে পারবে না। তাছাড়া উন্নত এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে (এইএসএ) রাডার সিস্টেম, ডাটা লিংক সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফার পডের সাহায্যে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সমুদ্রে থাকা শত্রু পক্ষের যুদ্ধজাহাজ ডিটেক্ট করতে সক্ষম।
এই কমব্যাট ড্রোনের ৬টি হার্ড পয়েন্টে মোট ১,৩৫০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, গাইডেড এণ্ড আনগাইডেড মিসাইল ও বম্বস বহন করতে পারে। তাছাড়া ক্রুজ মিসাইল বহন করার পাশাপাশি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে আকাশেই শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করার সক্ষমতা তুরস্কের এই কমব্যাট ড্রোনটিকে বিশ্বের বুকে একটি শ্রেষ্ঠ কমব্যাট ড্রোনের স্থানে নিয়ে গেছে।
এই কমব্যাট ড্রোনটিতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এমএএম-এল, এমএএম-সি, জাভেলিন, এল-ইউএমটিএএস, বোজক, এমকে-৮১, এমকে-৮২, এমকে-৮৩, উইংড গাইডেন্স কিট (ইউপিএস) এমকে-৮২ ডিভাইসের পাশাপাশি গুলুকান, বোজডোয়ান এবং এসওএম-এ স্ট্যাণ্ড অফ ক্রুজ মিসাইল (এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল) দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। তাছাড়া রকেটসানের তৈরি (এল-ইউএমটিএএস) এন্টি ট্যাংক মিসাইল এটিতে ইনস্টল করার সম্ভব।
এই কমব্যাট (ইউসিএভি)-কে এডভান্স অটোনোমাস (এআই) কন্ট্রোলিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের ফ্লাইট রুট ও মিশন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, যা একে অটোনোমাস রোবটিক সিস্টেমের পর্যায়ের আধুনিক এরিয়াল সিস্টেম বলা যায়।
পরিশেষে আকিনসির মতো ডেডিকেটেড কমব্যাট ড্রোন প্রযুক্তি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রের ভারসাম্যই বদলাবে না, বরং বিশ্বের প্রতিরক্ষা নীতিতেও হয়ত এক নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করবে। তবে তুরস্কের এই অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে যে, সীমিত সম্পদ থেকেও প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব, যদি থাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, টেকসই পরিকল্পনা, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস।