ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পাহেলগামে দেশীয় পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই।
তবে, পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন বলছে- ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা একটি পর্যটক দলের ওপর গুলি চালালে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাশ্মীরের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। “অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে জানিয়েছেন ওই জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা। তবে এখনও এই হতাহতের সংখ্যা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
হামলাটি ঘটে পাহেলগাম থেকে তিন মাইল (প্রায় ৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়ঘেরা বিখ্যাত বাইসারান এলাকায়, যেটি ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ একে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা বলে অভিহিত করেছেন।
কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এই হামলাকে “পর্যটকদের ওপর কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “এই নিন্দনীয় হামলার পেছনে যারা আছে, তারা শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।” ভারতের সামরিক বাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে হামলাকারীদের খোঁজে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জাো গেছে, এই হামলার দায় এখনো কোনো গোষ্ঠী স্বীকার করেনি, তবে ১৯৮৯ সাল থেকে এই মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা কিছুটা কমে এসেছে, তবুও এতে এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। কাশ্মীরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বিরল হলেও, একেবারে অনন্য নয়।
গত বছরের জুন মাসে সর্বশেষ বড় হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হন, যখন হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাস যোদ্ধাদের হামলার পর একটি গভীর খাদের মধ্যে পড়ে যায়।
২০২৩ সালে, ভারত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শ্রীনগরে জি২০ পর্যটন বৈঠক আয়োজন করে, এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে যে ২০১৯ সালে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর “স্বাভাবিক অবস্থা ও শান্তি” ফিরে এসেছে। এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারত বর্তমানে এই অধিকৃত ভূখণ্ডে আনুমানিক ৫ লাখ সৈন্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন রেখেছে।
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা কিছুটা কমে এলেও এই হামলা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও, মাঝেমধ্যেই বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটছে।
২০২৪ সালে সরকারিভাবে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন পর্যটক কাশ্মীর ভ্রমণ করেছেন। পাহেলগাম সেইসব গন্তব্যের মধ্যে অন্যতম, যেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এই বর্বরোচিত হামলায় শোক ও নিন্দার ছায়া নেমে এসেছে পুরো কাশ্মীরে।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.