সিরাজুর রহমান#
গত ১৯ অক্টোবর (রবিবার, ২০২৫) তুরস্ক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষায় তুর্কী বিমান বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের অধিক রেঞ্জের “Gökdoğan” এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের টেস্ট ফায়ার সম্পন্ন করা হয়, যাকে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে একটি মাইলফলক অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি তুর্কী বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে শর্ট রেঞ্জের (২৫-৪০ কিলোমিটার) “Bozdogan” এয়ার টু এয়ার মিসাইলের পরীক্ষা চালানো হয়।
তুরস্ক এবার মূলত পরিকল্পনা মাফিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডভান্স এআইএম-১২০ সি/ডি সিরিজের (বিভিআর) এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং শর্ট রেঞ্জের এ আইএম-৯ সাইড উইন্ডার মিসাইলের বিকল্প হিসেবে নিজ দেশের তৈরি “Gokdogan” ও “Bozdoğan” মিসাইল চূড়ান্তভাবে সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে বহুল পরীক্ষিত এবং কার্যকর এয়ার টু এয়ার মিসাইল হিসেবে এআইএম-১২০ (AMRAAM) সিরিজের বিয়োন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ মিসাইলকে বিশেষ ভাবে বিবেচনা করা হয়। আর আমেরিকার রেইথন কোম্পানির তৈরি এই সিরিজের মধ্যে সবচেয়ে অ্যাডভান্স এবং কার্যকর বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ (বিভিআর) মিসাইল হচ্ছে এআইএম-১২০ডি৩ সিরিজের অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল (এএমআরএএএম-ডি)। ম্যাক ৪ গতির AIM-120D-3 (AMRAAM-D) মিসাইল প্রথম পরীক্ষা করা হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন, যখন মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি F-15 Strike Eagle যুদ্ধবিমান এটি ব্যবহার করে ১৬০ কিমি দূরত্বের একটি আকাশ লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস করে।
তবে আমেরিকার পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে বিয়োন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) মিসাইল ডিজাইন ও তৈরির প্রতিযোগিতায় ফ্রান্সের মেটওর, রাশিয়ার আর-৭৭ এবং চীনের পিএল-১৫ দুনিয়া কাঁপাতে শুরু করে দিয়েছে। আর এবার এই প্রতিযোগিতায় এবার যুক্ত হলো তুরস্কের Gökdoğan এবং ভারতের অস্ত্র মার্ক-২ সিরিজের এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল। রাশিয়ার তৈরি আর-৭৭ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ১১০ কিলোমিটার, চীনের পিএল-১৫ এর রেঞ্জ আনুমানিক ১৪৫-২০০ কিলোমিটার এবং ফ্রান্সের তৈরি মেটওর অ্যাডভান্স এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার। তাছাড়া তুরস্কের “Gokdogan” মিসাইলের রেঞ্জ ১০০ কিলোমিটার এবং ভারতের অস্ত্র মার্ক-২ সিরিজের উন্নত সংস্করণের (বিভিআর) রেঞ্জ আনুমানিক ১৫০-১৬০ কিলোমিটার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বব্যাপী আধুনিক যুদ্ধ প্রযুক্তির অগ্রগতি এখন আর কেবলমাত্র উন্নত বা বড় শক্তিগুলোর হাতে সীমাবদ্ধ নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোও নিজস্ব গবেষণা, প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে প্রতিরক্ষা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বিশেষ করে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির মিসাইলের সফল পরীক্ষা তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে যে আত্মনির্ভরশীল ও উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি।

