সিরাজুর রহমান#
আল জাজিরা নিউজ এজেন্সির দেওয়া তথ্যমতে, তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে নতুন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। যার আলোকে গতকাল ২৭ অক্টোবর আঙ্কারায় তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ বিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ১০.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ২০টি অত্যাধুনিক ইউরোফাইটার টাইফুন (EF-2000) যুদ্ধবিমান ক্রয়ের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
তুরস্ক মূলত ৪++ প্রজন্মের ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমানের একেবারে আপগ্রেড ভার্শন ওয়েপন্স, মেন্টেইনেন্স অ্যান্ড ট্রেনিং প্যাকেজসহ ক্রয় করবে। তবে, এর পাশাপাশি তুরস্ক তার বিমান বাহিনীর ঘাটতি মোকাবিলায় কাতারের কাছ থেকে বেশ কিছুসংখ্যক পুরোনো (আধুনিকায়নকৃত) Tranche-3A ভার্সনের ইউরো ফাইটার টাইফুন সংগ্রহের ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কাতারের সরকারের তরফে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বর্তমানে তুরস্ক কমব্যাট ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে এবং মিসাইল প্রযুক্তিতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করলেও বাস্তবে দেশটির বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট ফ্লিট শুধু আমেরিকার তৈরি পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, তুরস্কের সাথে বৈরী সম্পর্ক গ্রিসের বিমান বাহিনীর প্রায় অধিকাংশ এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোকে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে ব্লক-৭০/৭২ পর্যায়ে আপগ্রেড করে দিয়েছে বা এখনো আপগ্রেড করে দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন চুক্তির আলোকে গ্রিস প্রাথমিকভাবে এবার ২০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫এ স্টেলথ ফাইটার জেট পেতে যাচ্ছে। যা নিশ্চিতভাবেই তুরস্কের জন্য বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া, তুরস্ক বার বার তাদের বিমান বাহিনীর পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আধুনিকায়নের জন্য আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানালেও বাস্তবে বিভিন্ন অজুহাতে তা বিলম্বিত করা হচ্ছে বলে মনে করে এরদোয়ান প্রশাসন।
তবে তুরস্কের এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিউজ মিডিয়ায় গ্রিসের বিমান বাহিনির ব্যাপক আধুনিকায়নের কথা বার বার বলা হলেও বাস্তবে অদূর ভবিষ্যতে ইস&রাইলের সামরিক আগ্রাসন কিংবা তাদের সাথে যুদ্ধের ঝুঁকি মোকাবেলায় হয়ত নতুন এই প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে তুরস্ক। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের সাথে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে ইরানের যুদ্ধবিমানের চরম অক্ষমতা এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভেঙ্গে পরার মতো বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে এবার বিমান বাহিনীর ব্যাপক আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যেতে চায় তুরস্ক।
এদিকে, তার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) টিএফ-এক্স প্রজেক্টের প্রথম এয়ারক্রাফট হিসেবে (কেএএএন) এর প্রোটোটাইপ কপি তৈরি সম্পন্ন করে গত ২০২১ সালের ৪ঠা নভেম্বর। তবে এখনো পর্যন্ত এর বেশকিছু প্রোটোটাইপ কপি তৈরি করা হলেও, বাস্তবে তা সার্ভিসে আসতে আগামী ২০২৮-২৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে তুরস্ককে। যা দেশটির সার্বিক প্রতিরক্ষা ও বিমান বাহিনীর সক্ষমতার অর্জনে গুরুতর প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তাই, এই স্টপ-গ্যাপ বা ঘাটতি মোকাবিলায় তুরস্ক তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে নতুন ২০টি ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান (ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্রেনিং প্যাকেজসহ) ক্রয় বা সংগ্রহ করতে চায়। তবে খুব সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বা ইশারায় শেষ পর্যন্ত তুরস্কের এই পরিকল্পনা সফল নাও হতে পারে। ইউরোপের দেশগুলো আর যাই করুক, আমেরিক ক্ষিপ্ত হয় এমন কাজে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যাবে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে তুরস্কের বিমান বাহিনীতে প্রায় ২৪৩টি এফ-১৬ (ব্লক-৩০/৪০) ফাইটিং ফ্যালকন এবং ৪৮টি অতি পুরোনো এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান ছাড়া আপাতত শক্তিশালী আর কোনো যুদ্ধবিমান নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে একেবারে নিজস্ব দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি যুদ্ধবিমান দ্বারা এই ঘটতি পূরণে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে গেলেও নিজস্ব ইঞ্জিন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, লো প্রোডাকশন ক্যাপাবিলিটি এবং বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের সূক্ষ্ম বাধার মুখে তুর্কি বিমান বাহিনীর প্রকৃত আধুনিকায়ন একরকম থমকে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে, গত ২০১৯ সালে আমেরিকার এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট প্রজেক্ট থেকে তুরস্ককে বাদ দিলে দেশটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজস্ব প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান ডিজাইন ও তৈরিতে মনোনিবেশ করে। অথচ এফ-৩৫ প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে তুরস্ক আগেই কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। অথচ, রাশিয়ার এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের কারণে শেষমেষ তুরস্ককে লকহিড মার্টিন মাল্টি নেশন এফ-৩৫ প্রজেক্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয় আমেরিকা। যা পশ্চিমা বিশ্বের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা তুরস্কের জন্য এক চরম শিক্ষা হিসেবে দেখা হয়।#আল জাজিরা, ডিফেন্স নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স
-- বিজ্ঞাপন ---
পরবর্তী র্সবাদ

