কাজী ফেরদৌস##
কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চট্টগ্রামের ডক্টর মইনুল ইসলামের কোন একটা পত্রিকায় একটা লেখা পড়েছিলাম যেখানে ডক্টর মঈনুল ইসলাম হাসিনা ইউনুস দ্বন্দ্বের গোড়ার কথা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলে ছিলেন । তার সার সংক্ষেপ হলো ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইউনুস হাসিনার সম্পর্ক ছিল মধুর। হাসিনা ইউনুস সাহেবের গ্রামীণ ফোন কে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেকটা অব্যবহৃত অপটিক্যাল ফাইবার প্রায় বিনা মূল্যে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেন। এতে করে গ্রামীণ ফোন মোর্শেদ খান এর সিটি সেল কে কোনঠাসা করতে সক্ষম হয় এবং তরতর করে এগিয়ে যায়। এখনো সেই সুযোগের কারণে গ্রামীণ ফোনকে কেউ প্রতিযোগিতায় হারাতে পারছে না।
১৯৯৭ সালে প্রফেসর ইউনুস সাহেব আমেরিকায় গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের একটা মডেল সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাসিনা কে বিশেষ অতিথি হিসেবে নিয়ে যান। প্রকল্প টি উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। গন্ডগোল টা শুরু হয় সেখানেই।উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিল ক্লিনটন নাকি হঠাৎ বলে বসেন প্রফেসর ইউনুস তাঁর ক্ষুদ্র ঋণের এই মডেলের জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিৎ। তখন হাসিনা নাকি চট করে বলে বসেন- ‘Mr.President ! My father Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman was the first to introduce Micro Credit in Bangladesh ’! প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন নাকি তাঁর সেই কথায় কোন মন্তব্য করার ও প্রয়োজন মনে করে নি। এতে শেখ হাসিনা নাকি মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। অথচ কে না জানে প্রফেসর ইউনুস এর আগে পৃথিবীতে কেউ এ ধরণের ব্যতিক্রম ধর্মী ক্ষুদ্র ঋণের আইডিয়া চিন্তাও করে নি। ব্যাপারটা হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু হয়নাই। ইউনুস সাহেব এর কপালে যে দুঃখ লিখা আছে !
পরের বছর ২০০০সালে বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে আসেন। সোনার গাঁ হোটেলের খাস কামরায় আবার আলাপচারিতায় হঠাৎ নাকি ক্লিনটন বলে বসেন যে প্রফেসর ইউনুসকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিৎ। কথাটা শুনেই হাসিনা নাকি বলে বসেন Mr.President , Government of Bangladesh should get the Nobel Peace Award for signing peace Treaty with the rebels of Chittagong Hill Tracts. তাঁর সে কথায় বিল ক্লিনটন কোন কর্নপাত না করায় হাসিনা নাকি ডক্টর ইউনুস এর উপর ক্ষেপে যায় এবং বেশ উচ্চ স্বরে নাকি বলে উঠেন, এই লোকটা অনেক বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। তাকে সাইজ করতে হবে!
উপস্থিত অতিথিদের অনেকে হাসিনার মন্তব্য টা শুনে ফেলেন।পরদিন ডক্টর ইউনুসের কোন একজন উচ্চ পর্যায়ের নিকটজন ডক্টর মইনুল ইসলাম কে ফোন করে জানতে চান কথাটা তিনি শুনেছেন কিনা? মঈনুল ইসলামের সাথে ডক্টর ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে মঈনুল ইসলাম ও ডক্টর ইউনুসকে মেজো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। সুতরাং তিনি প্রফেসর ইউনুসকে ফোন করে বিষয় টি জানতে চাইলে, ইউনুস সাহেব নাকি দুঃখ করে বলেন, মঈন তুমি বলতো এখানে আমার করার কি কিছু ছিল? ক্লিনটন সাহেব কথার কথা হিসেবে কথা টা বলেছেন। এতে কার কি আসে যায়? কিন্তু ওখানে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব ফরাসউদ্দীন আহমেদ সুযোগের সদব্যবহার করতে ছাড়লেন না। ডক্টর ইউনুস এর সাথে তাঁর সম্পর্ক নাকি ভালো ছিলনা। তাই তিনি শেখ হাসিনা কে খুশি করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের অনিয়ম তদন্ত করবার জন্য ৩৬ সদস্যের এক বিশাল অডিট টিম পাঠিয়ে দেন এবং এন্তার অভিযোগের দীর্ঘ ফিরিস্তি তৈরি করেন।
কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছে হেরে যাওয়ায় হাসিনার মনোবাসনা পুরন হয়নি। বিএনপি সরকারের অনাগ্রহের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের অনিয়ম তদন্ত স্থগিত হয়ে যায়। ২০০৬ সালে ডক্টর ইউনুস শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেলে হাসিনার বুকের আগুন আবার দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। কোথায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি সই করার জন্য তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা, সেই পুরস্কার শেষ পর্যন্ত প্রফেসর ইউনুস ভাগিয়ে নিল? এত বড় বেয়াদব লোক! আবার এক এগারো পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল ঘোষণা করে তাঁকে রাজনীতি থেকেও মাইনাস করার ষড়যন্ত্র! সুতরাং শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে। হাসিনার ভাগ্য ও ভালো। জেনারেল মইন ইউ আহমদ এর সহায়তায় তাঁকে সেইফ এক্সিট দেওয়ার শর্তে হাসিনা ২০০৮সালের একটা জালিয়াতির নির্বাচনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই লেগে যায় প্রফেসর ইউনুস এর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন হয়রানি মূলক মামলায় জড়ানো হয় তাঁকে। সাথে শুরু হয় প্রফেসর ইউনুস এর বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল। এক সময় মানুষ বুঝতে শুরু করে প্রফেসর ইউনুস এর খালেদা জিয়ার মতো জেলে যাওয়া নিছক সময়ের ব্যাপার মাত্র । তবে এর মধ্যে ঘটে যায় জুলাই অভ্যুথান। গদি ছেড়ে হাসিনার ভারত পলায়ন এবং শুন্য গদিতে ইউনুসের আরোহন।
কথায় আছে না Man Proposes God Disposes. কোথায় এখন প্রফেসর ইউনুস এর জেলে থাকার কথা সেই জায়গায় এখন হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার তোড়জোড় চলছে। হাসিনা কি ভাবছেন এখন? তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের ফরমায়েশী রায় গুলো কি সঠিক ছিল? আসলেই কি Godess of Nemesis বলে কিছু কি সত্যি আছে? না হয় এভাবে টেবিল উল্টে যায় কি করে?##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.